সিলেটে বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াছির আলীর মুক্তিযোদ্ধা সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জাল তৈরী করে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করে ওয়ারিছ আলী মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সব ধরনের সরকারী সুযোগ সুবিধা আত্মসাৎ করার পায়তারা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধা ওয়াছির আলী উরফে আশক আলী উরফে আশই মিয়ার মেয়ে জফুরা বেগম গত ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ইং সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৫নং উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের বেকিমুড়ারপাড় গ্রামের বাসিন্দা আঃ রহমানের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াছির আলী উরফে আশক আলী উরফে আশই মিয়া। তিনি ৫নং সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা নাম্বার-০১৯১০ ০০৬১১৭, লাল মুক্তিবার্তা নং- ৫০১০ ৮০২০৪, বেসামরিক গেজেট নম্বর-২০৫২।
বাংলাদেশ স্বাধীনের ১০/১২ বছর পরে একমাত্র কন্যা সন্তান জফুরা বেগমকে ৬ মাস বয়সে রেখে বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াছির আলী মারা যান। পিতা মারা যাওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করছেন মেয়ে জফুরা বেগম। গত ৬ ফেব্রুয়ারী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে জফুরা বেগমকে পিতার মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক কাগজপত্র নিয়ে উপস্থিত থাকার জন্য একটি নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশের প্রেক্ষিতে তিনি গত ৩ মার্চ ও পরবর্তীতে ১০ মার্চ ভূমি অফিসে উপস্থিত থাকেন। জফুরা বেগম কোম্পানীগঞ্জ ভূমি অফিসে উপস্থিত হলে তদন্ত কর্তৃপক্ষ তার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াছির আলীর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না দেখে ও তাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন এবং ১৫০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ইচ্ছামত লিখিয়া দস্তখত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জফুরা বেগম অভিযোগ করেন।
এ সময় ভূমি অফিসে বসা থাকাবস্থায় কয়েকজন লোক জফুরা বেগমকে নানা ধরণের অপমানজনক কথাবার্তা বলেন। তিনি অপমানজনক কথার কোন জবাব না দিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন।
এদিকে, ওয়ারিছ আলী নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে জাল কাগজপত্র তৈরি করে অন্যায়ভাবে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা সহ রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার অপতৎপরতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধার একমাত্র কন্যা জফুরা বেগম পিতার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা সহ সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করার নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস মহোদয় এবং সিলেটের জেলা প্রশাসক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সহ সর্বমহলের সহযোগিতার কামনা করেছেন।
এব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা কন্যা জফুরা বেগম মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সিলেট মাননীয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালত সিলেট এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৫নং উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের বেকিমুড়ারপাড় গ্রামের বিশিষ্ট মুরুব্বিয়ানগণের বরাবরে পৃথক পৃথকভাবে অভিযোগ ও দরখাস্তের মাধ্যমে গ্রাম্য উজা উয়ারিছ আলীর ভূঁয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে স্বার্থ হাসিল ও রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা আত্মসাৎ ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
আলাপকালে বেকিমুড়ারপাড় জামে মসজিদের মসজিদ পরিচালনা কমিটির মোতাওয়াল্লী আবুল হোসেন জানান, কথিত মুক্তিযোদ্ধা নামধারী গ্রাম্য উজা ওয়ারিছ আলী সে কোন মুক্তিযোদ্ধা নয়, গত কয়েকদিন আগে আমাদের গ্রামে একটি কাগজ নিয়ে এসে বলে সবাইকে স্বাক্ষর দিতে। এলাকাবাসী যখন বুঝতে পারেন সে ভূঁয়া ও জালিয়াতির জন্য স্বাক্ষর নিতে চাচ্ছে, তখন গ্রামবাসী স্বাক্ষর দেননি।
গ্রামের মুরব্বিয়ানগণ, সাবেক ও বর্তমান মেম্বার, ৫/৬ জন মুক্তিযুদ্ধা সহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বলেন, ওয়ারিছ আলী অপকৌশল করে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে চায়, প্রকৃত পক্ষে ওয়াছির আলী উরফে আশই একজন প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা। এ বিষয়টি এলাকার ছোট-বড় সকলেরই জানা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াছির আলী উরফে আশই মিয়ার কন্যা জফুরা বেগম বলেন, বিশাল অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে সত্যিকার একজন মুক্তিযোদ্ধার উত্তরাধিকারী থেকে আমাকে বঞ্চিত করতে বানোয়াট ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কলা কৌশলে মুক্তিযোদ্ধা দাবিদার উজা ওয়ারিছ আলীকে নতুন মুক্তিযোদ্ধা বানানোর পায়তারা করা হচ্ছে। যারা এ ধরনের জালিয়াতির কাজে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে প্রকৃত ও সঠিক দেশ প্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাকে মুল্যায়ণ করার যথাযথ পদক্ষেপ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধার উত্তরাধিকারী ভাতাসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখতে বর্তমান সরকারের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম মহোদয় ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সিলেটের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও সচেতন মহলের নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার কন্যা জফুরা বেগম।